ইতেকাফইসলাম শিক্ষা

ইতেকাফ কি করতেই হবে বিস্তারিত এখানে দেখুন

5/5 - (1 vote)

ইতেকাফ কি করতেই হবে? ইতেকাফ : তাৎপর্য, ফজিলত ও মাসায়েল
রমজানের শেষ ১০ দিনে কেন?

শবেকদরকে পাওয়া এবং এই পবিত্র রাতের ঘোষিত ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ইতেকাফ থেকে উত্তম আর কোনো উপায় নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা কদরের রাতকে নির্দিষ্ট করে দেননি। বরং এর তারিখ গোপন রেখেছেন। যাতে মুসলমানরা রমজানের শেষ ১০ দিনের সব বেজোড় রাতে রাত জেগে আমল করতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের পক্ষে রাতের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে নিয়োজিত থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু মানুষ ইতেকাফ অবস্থায় যদি রাতে ঘুমিয়েও থাকে, তবু তাকে ইবাদতকারীদের মধ্যে শামিল করা হবে। তখন শবেকদরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে ব্যয় করার ফজিলত অর্জন করবেন তিনি। এটি এত মহান ফজিলত, যার তুলনায় ১০ দিনের এই মেহনত ও শ্রম কিছুই না।

ম দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম 2022 | ম দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ

নবী (সা.) যেভাবে ইতেকাফ করেন : ‘হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। ওফাত পর্যন্ত তিনি এভাবেই করে গেছেন। (অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ইতেকাফের এই ধারা অব্যাহত ছিল) (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। হজরত নাফে বলেন, আমাকে হজরত ইবনে উমর (রা.) ওই স্থানটি দেখিয়েছেন যে স্থানে নবী (সা.) ইতেকাফ করতেন। (মুসলিম শরিফ)

ইতেকাফের ফজিলত : হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ইতেকাফকারী গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তাঁর সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে থাকে, যেভাবে তিনি নিজে করতেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত) অর্থাৎ সে ইতেকাফের বাইরে থাকতে যেসব ভালো কাজ আনজাম দিত, যা সে ইতেকাফ থাকার কারণে করতে পারছে না, সেসব আমল আগের মতোই লিপিবদ্ধ হতে থাকে।

ইতেকাফ যাঁরা করবেন : ইতেকাফের জন্য জরুরি হলো, মুসলমান হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। সুতরাং কাফের এবং মাতাল লোকের ইতেকাফ জায়েজ নেই। নাবালেগ তবে বুঝ হয়েছে- এমন বাচ্চা যেরূপ নামাজ, রোজা পালন করতে পারে, তেমনি ইতেকাফও করতে পারে। (বাদায়েউস সানায়ে) নারীরাও ঘরে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে ইতেকাফ করতে পারে। তবে তার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হায়েজ ও নেফাস থেকে পাক থাকতে হবে। ওয়াজিব ইতেকাফ এবং সুন্নাত ইতেকাফে শর্ত হলো রোজাদার হতে হবে। যার রোজা হবে না তার ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না। তবে নফল ইতেকাফে রোজা আবশ্যক নয়।

ইতেকাফের স্থান : পুরুষরা শুধু মসজিদেই ইতেকাফ করতে পারে। ইতেকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদে হারাম, তারপর মসজিদে নববী, তারপর মসজিদে আকসা, এরপর যেকোনো জামে মসজিদ। জামে মসজিদে ইতেকাফ উত্তম। কারণ জুমার জন্য অন্যত্র যেতে হবে না। কিন্তু জামে মসজিদে ইতেকাফ করা জরুরি নয়। বরং যেসব শরয়ী মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়, সে মসজিদে ইতেকাফ করতে পারে। (শামী ২/১২৯)

স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম

তিন প্রকার ইতেকাফ : রমজানুল মুবারকের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফই সুন্নাত। ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ নবী (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নাত ইতেকাফ বলা হয়।

ওয়াজিব ইতিকাফ : মান্নতের ইতেকাফ ওয়াজিব। সুন্নাত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

নফল ইতেকাফ : এ ইতেকাফ মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নাত। এই তিন ধরনের ইতেকাফের ভিন্ন ভিন্ন বিধান আছে। এখানে শুধু সুন্নাত ইতেকাফের কিছু বিধান আলোচনা করা হলো। সুন্নাত ইতেকাফকারীদের ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগে মসজিদের সীমানায় প্রবেশ করতে হবে। শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যেকোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নাত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। (শামী)

ইতেকাফের সবচেয়ে বড় রুকন হলো ইতেকাফের পুরো সময় মসজিদের সীমানায়ই অবস্থান করা। শরয়ী হাজত তথা শরিয়তস্বীকৃত বাধ্যবাধকতা ছাড়া মসজিদের সীমানা থেকে বাইরে না যাওয়া। শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের সীমানার বাইরে সামান্য সময়ও অবস্থান করলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

ইতেকাফ

মসজিদের সীমানা : অনেক লোক মসজিদের সীমানা সম্পর্কে অবগত নন। এ কারণে অনেকে ইতেকাফ নষ্ট করে থাকেন। অতএব মসজিদের সীমানা সম্পর্কে অবগত হওয়া অতীব প্রয়োজন।

সাধারণত মসজিদের পুরো বাউন্ডারিকেই মসজিদ বলে। অথচ মসজিদের পুরো বাউন্ডারি মসজিদের শরয়ী সীমানা হওয়া আবশ্যক নয়। বরং শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদের সীমানা ওই টুকুই, যেটুকু স্থান মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা ওয়াকফ করার সময় মসজিদের নিয়ত করেছেন।

জমিনের কোনো অংশ মসজিদ হওয়া এক জিনিস আবার মসজিদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ওয়াকফ করা আরেক জিনিস। শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ শুধু ওই স্থানকে বলা হয়, যে স্থানকে শুধু নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মসজিদ বলে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু প্রতিটি মসজিদেই এমন কিছু জায়গা থাকে, যে জায়গা মসজিদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তায় ওয়াকফ করা হয়। যেমন ওযুর স্থান, ইস্তিঞ্জার স্থান, হাম্মাম, গোসলখানা, ইমাম সাহেবের হুজরা ইত্যাদি। এগুলো মসজিদের হুকুমের বাইরে। ইতেকাফকারী শরিয়তস্বীকৃত প্রয়োজন ব্যতিরেকে এসব স্থানে গেলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

কিছু কিছু মসজিদে তো এসব স্থান মসজিদ থেকে পৃথক থাকে। তাই এই স্থানগুলো যে মসজিদের বাইরের অংশ তা সহজে অনুমান করা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ মসজিদে এসব প্রয়োজনীয় অংশ মসজিদের সঙ্গে লাগানো ও সম্পৃক্ত থাকে। তাই প্রত্যেকে জ্ঞাত হয় না যে, এসব মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়। অনেক সময় মসজিদের সিঁড়ি, যা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা হয় তা মসজিদের সীমানার অন্তর্ভুক্ত থাকে না। সেরূপ স্থানেও ইতেকাফকারী বিনা কারণে গেলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বা ইমামের কাছে মূল মসজিদের সীমানা কতটুকু, তা জেনে নেওয়া ইতেকাফকারীদের জন্য আবশ্যক।

ইতেকাফ তিন ধরনের। যথা—

১. ওয়াজিব : ওয়াজিব ইতেকাফ হলো, মানতের ইতেকাফ। অর্থাৎ কেউ যদি মানত করে, ‘আমার কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হলে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করব।’ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে গেলে অবশ্যই ইতেকাফ করতে হবে। এই ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজা ছাড়া এই ইতেকাফ আদায় হবে না।

২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা : সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতেকাফ হলো, মাহে রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ। এটি মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে কমপক্ষে একজন মানুষ হলেও আদায় করতে হবে। নতুবা সবাই গোনাহগার হবে।

৩. মুস্তাহাব বা নফল : মুস্তাহাব ইতেকাফ হলো, কিছুক্ষণের জন্য ইতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান করা। এটা অত্যন্ত বরকতময় ও সওয়াবের কাজ। স্বাভাবিকভাবে সবাই মসজিদে প্রবেশ করার সময় ইতেকাফের নিয়ত করলে ইতেকাফও আদায় হবে, সওয়াব পাওয়া যাবে।

নফল ইতেকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ রমজানের শেষ দশকে সুন্নত ইতেকাফ পালন করতে না পারলে যতদূর সম্ভব, নফল ইতেকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। নফল ইতেকাফ বছরের যে কোনো সময়ই করা যায়। ইতেকাফের জন্য রোজা শর্ত; কিন্তু রমজানের বাইরে স্বল্প সময় (একদিনের কম সময়) ইতেকাফ করলে তার জন্য রোজার শর্ত নয়।
ইতেকাফ আল কাউসার

পূর্ণ দিবস ইতেকাফের জন্য রোজা শর্ত। নফল ইতেকাফ মানত করলে বা আরম্ভ করে ছেড়ে দিলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর জন্যও রোজা শর্ত এবং এটি একদিন (চব্বিশ ঘণ্টা) এর কমে হবে না।

(মাজমুআয়ে ফাতাওয়া)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button