Education | শিক্ষাশিক্ষা

খুললো স্কুল-কলেজ, দেড় বছর পর সশরীরে পাঠদান শুরু

Rate this post

দেড় বছর পর সশরীরে পাঠদান শুরু

দেড় বছর পর সশরীরে পাঠদান শুরু মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় প্রায় দেড় বছর পর আজ রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কোথাও সংক্রমণের হার একটানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশে স্থিতিশীল থাকলেই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে শনিবারও সংক্রমণের হার ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। অবশ্য এটা আগের দিনের তুলনায় প্রায় দেড় শতাংশ কম। সেই হিসাবে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি পাঠদানের জন্য ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৩ কোটি শিক্ষার্থী। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে এখন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে না। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত, তেমনি উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও। মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিলানোর মাঝেই শিক্ষকের আনন্দ। তা আবার শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা উচ্ছ্বসিত।

এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্লাসে বসার আনন্দে মাতোয়ারা ছাত্রছাত্রীরা। এক সপ্তাহ ধরে তারা স্কুলব্যাগ, ড্রেস, জুতা ইত্যাদি কিনে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের স্বাগত জানাতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের স্কুল-কলেজ অনেকটাই নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবু অভিভাবকরা কিছুটা অস্বস্তি আর উদ্বেগে আছেন।

সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সরাসরি ক্লাসরুমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও আনন্দিত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর জাতীয় সংক্রমণ যাতে বেড়ে না যায় সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানাই। শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাই।‌ আমরা শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে‌ ৬৩ নির্দেশনা

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ৯ স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জন্য ৬৩ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুতের জন্য দেওয়া হয়েছে আলাদা ১৯ দফা নির্দেশিকা। রুটিন তৈরির জন্য পাঠানো হয়েছে ১১ দফা করণীয়। আর স্কুল-কলেজের হোস্টেল খুলতে আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে ১৪ নির্দেশনা। প্রাথমিক স্তরের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মৌলিক রুটিন করে দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে ১৬ দফা নির্দেশনা। উভয় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই স্তরে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হলো কিনা ওই তথ্য দৈনিক শিক্ষার মাঠ প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখতে মাঠ প্রশাসনকেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা দৈনিক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার সমস্যাসহ সার্বিক দিক বিকেল ৩টার মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) জানাবেন। একইভাবে উপজেলা ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও মনিটরিং করে প্রতিদিন বিকেল ৪টার মধ্যে মাউশিতে প্রতিবেদন দেবেন।

প্রাথমিকে মানতে হবে ১৬ নির্দেশনা

স্কুল খোলার পর কীভাবে চলবে এ সংক্রান্ত ১৬ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাগুলো হলো-

>> দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরত (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে।

>> শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে একাধিক কক্ষ ও শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে।

>> পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

>> পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহের ছয় দিন চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন আসবে।

>> একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

>> কোনো এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্দেশিত বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করবে।

>> প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশিকা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতিপালন করতে হবে এ রকম ১৬ টি নির্দেশনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। ‌

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করবেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। সমস্যা হলে তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) জানাতে হবে।

রুটিন

পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মৌলিক রুটিন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, প্রতিদিন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হবে। সঙ্গে একেকদিন এক একটি শ্রেণির ক্লাস হবে। যেসব স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি সেখানে প্রয়োজনে দুই শিফটে ক্লাস নেওয়া যাবে। প্রথম শিফট সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৩টা ঘণ্টা চলবে। দুপুরে ৩০ মিনিটের বিরতি থাকবে। এরপর ক্লাস শুরু হয়ে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে।

প্রতিদিনই ক্লাস শুরুর আগে দশ মিনিট করে করোনা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা করতে হবে। এর আগে ৩০ মিনিট থাকবে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশের জন্য। একসঙ্গে প্রবেশ ও বের হওয়া যাবে না। বুধ ও বৃহস্পতিবার কেবল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে। অন্য চার দিন তাদের সঙ্গে আরেকটি শ্রেণির ক্লাস হবে। সে ক্ষেত্রে শনিবার চতুর্থ, রোববার তৃতীয়, সোমবার দ্বিতীয় ও মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণির ক্লাস হবে। এই চার শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান হবে। আর পঞ্চম শ্রেণির সব বিষয়েই পাঠদান চলবে। মাধ্যমিক স্তরের জন্য প্রথমে রুটিন করা হলেও পরে বাতিল করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিজের প্রয়োজনের নিরিখে কর্মপন্থা ঠিক করতে বলে দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button