Education | শিক্ষাশিক্ষা

নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় যত পরিবর্তন

Rate this post

রিমার্জিত কারিকুলামের প্রস্তাবিত খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। ২০২২ সালে শিক্ষাক্রম পাইলটিংয়ের পর ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনের পর দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরিমার্জিত নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতির চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা রাখা হয়নি।  শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়ন রাখা হয়েছে বড় অংশে।  আবশ্যিক বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হবে। দেওয়া হবে সনদ।  নবম ও দশম শ্রেণির বই আলাদা করা হয়েছে। দশম শ্রেণির পাঠ্যবই পড়িয়েই এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।  অর্থাৎ এসএসসির ও সমমান পরীক্ষার আগে আর কোনও পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না।  উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বই আলাদা করা হয়েছে, পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। দুই পরীক্ষা ও মূল্যায়ন সমন্বয় করে ফলাফল দেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

কারিকুলাম সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন এই কারিকুলামে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বলা আছে। শিখন সময় প্রাথমিকে কতটা, মাধ্যমিকে কতটা হবে তা-ও বলা আছে। প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম-২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০; সেগুলো সম্পর্কেও এই কারিকুলামে বলা আছে।

কারিকুলাম পাইলটিং

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং করা হবে।  প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করা হবে। মাধ্যমিকের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছয় মাস পাইলটিংয়ের পর আমরা বিশ্লেষণ করতে পারবো। ২০২৩ সালে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করতে পারবো। ২০২৩ সালে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি চালু হবে। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি ও মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করবো।

পিইসি, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে হবে না

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও দেওয়া হবে। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনীকে পাবলিক পরীক্ষা বলছি না। প্রাথমিক শেষে একটা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে একটা সনদ পাবেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি ছাড়া সব শ্রেণিতে শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা হবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ধরনের পরীক্ষা থাকবে না। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতেও আমরা সনদ দেওয়া হবে। সনদ দেওয়ার জন্য তো পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই।’

নবম দশমে বিভাগ বিভাজন নয়, দশমের কারিকুলামেই এসএসসি পরীক্ষা

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নবম ও দশম শ্রেণি আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা করে পরীক্ষা হবে। শুধু দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নবম ও দশম শ্রেণির বই আলাদা হয়ে যাবে। কোনও বিভাগ বিভাজন  থাকবে না। সব শিক্ষার্থীই ১০টি বিষয় পড়বে।

পরীক্ষা ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন সমন্বিত করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল

দীপু মনি বলেন,  একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।  একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা বই থাকবে, আলাদাভাবে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশের দুই পরীক্ষা ও মূল্যায়নে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হবে।

প্রাথমিকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে শতভাগ। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। ৬০ শতাংশই ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প কলা (বিদ্যমান চারু ও কারুকলা) এগুলো শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।

মাধ্যমিকের পরীক্ষা ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন

মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলাম বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি (বিদ্যমান বিষয়-চারু ও কারু কলা) শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। নবম ও দশম শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

একাদশ দ্বাদশের পরীক্ষা ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। এছাড়া নৈর্বাচনিক, বিশেষায়িত কাঠামো, প্রকল্পভিত্তিক, ধারণা অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক ও ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে।  সেখানে নানা অ্যাসাইনমেন্ট হয়, প্রকল্প হয়, সেগুলোর মাধ্যমে হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর বছর শেষে একটি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরিতে এখন তা-ই হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুটো পরীক্ষার সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।

শ্রেণিতেই পাঠদান শেষ, শিক্ষা হবে আনন্দময়

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুরো শিক্ষাক্রম হবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক, আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। মুখস্থ নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠদান সম্পন্ন করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেন আর না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button