Science | বিজ্ঞানTechnology | প্রযুক্তিপ্রযুক্তিবিজ্ঞান

মহামারিতেও দ্রুত এগিয়েছে প্রযুক্তিখাত

Rate this post

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিগত সব সুবিধা। ফলে অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান করোনার কারণে সুসংহত হয়েছে। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান মহামারির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মত, আমূল এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে মহামারি করোনাভাইরাস। এ কারণে মানুষ তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নতুন জীবনধারণ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে তারা। এতে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, আগামী কয়েক বছরে যত সংখ্যক ব্যবহারকারী প্রযুক্তি জগতে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি ব্যবহারকারী এরই মধ্যে ক্ষেত্রটিতে প্রবেশ করেছে।

লকডাউনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। তাঞ্জানিয়ার সরকারি এক হিসাবে বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের আগে দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ। তবে এখন সেখানে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অর্থাৎ, করোনার কারণে দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় ৯৩ শতাংশ। শুধু তাঞ্জানিয়া নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই এভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গুরুত্ব বেড়েছে ই-লার্নিংয়ের। এই প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই ক্লাস করতে পারছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, কর্মক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে করোনার কারণে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই আগে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোমে’ বিশ্বাসী ছিল না। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখন বাসায় থেকেই কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কমে গেলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসায় থেকে কাজের সুযোগ দেবে বলে জানিয়েছে। এর কারণ, কর্মীরা বাসায় থেকে কাজ করলে প্রতিষ্ঠানের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়। এগুলোর পাশাপাশি করোনার সময়ে ই-কমার্স অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। বিনোদনের অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোও এখন আগের চেয়ে অনেক চাঙা।

মহামারির সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারের হার বেড়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। লকডাউনের কারণে মানুষকে ঘরে বসেই করতে হচ্ছে অনেক কাজ। এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিসেবা ব্যবহারকারীদের আরো বেশি সুবিধা দিতে নতুন কিছু ফিচার নিয়ে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। করোনার সময়ে ফেসবুক চালু করেছে ‘মেসেঞ্জার রুমস’ ফিচার। এটি জুম, স্কাইপ, গুগল মিট ও মাইক্রোসফট টিমসের মতোই কাজ করে।

ফেসবুকের মেসেঞ্জার রুমস ফিচারের মাধ্যমে একসঙ্গে ৫০ জন ভিডিও কলে যুক্ত হওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে একজনকে ফেসবুক বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাটরুম খুলতে হবে। পরে সেখানে ৪৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো যায়। কারো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও চ্যাটরুমে যুক্ত হতে পারবেন। এই ভিডিও কল যতক্ষণ ইচ্ছা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার পরই ভিডিও কলের জন্য জুম অ্যাপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গত বছর জুলাইয়ের শেষ দিকে ভারতের প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম গেজেটস নাউ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোরের আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে জুম। ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জুম অ্যাপ ডাউনলোড হয় ৯৪ মিলিয়ন বার। এর আগে এই রেকর্ড ছিল টিকটকের। বছরের প্রথম তিন মাসে ৬৭ মিলিয়নবার ডাউনলোডের রেকর্ড গড়েছে অ্যাপটি।

করোনার কারণে জুম অ্যাপ তুমুল জনপ্রিয়তা পেলেও নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ইস্যুতে এটি বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। এ কারণে ব্যবহাকারীরা বিকল্প কোনো প্ল্যাটফরম চাইছিলেন, যা দিয়ে ভিডিও কল করা যায়। ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণে অবশেষে মেসেঞ্জার রুমস চালু করে ফেসবুক।

করোনার মধ্যেই মেসেঞ্জারে ‘স্ক্রিন শেয়ারিং’ ফিচারও নিয়ে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। এই ফিচারের সাহায্যে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা, গ্রুপ চ্যাটে থাকা কিংবা মেসেঞ্জার রুমে থাকা অবস্থায় নিজের ডিভাইসের স্ক্রিন অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে। অর্থাৎ, আপনার ডিভাইসের স্ক্রিনে কী আছে তা চাইলেই অন্যদের দেখাতে পারবেন। এখন গ্রুপ চ্যাটে সর্বোচ্চ ৮ জনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা যায় এবং মেসেঞ্জার রুমসে এটি করা যায় ১৬ জনের সঙ্গে।

করোনার সময়ে ইনস্টাগ্রামও বেশকিছু আপডেট নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি- থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকের ব্যবহার। করোনা সম্পর্কিত গুজব ছড়ানো প্রতিরোধে এই ফিচার চালু করে ইনস্টাগ্রাম। শুধু তা-ই নয়, যেসব অ্যাকাউন্টে করোনা সম্পর্কিত কনটেন্ট আছে সেসব অ্যাকাউন্টকে রিকমেন্ডেশন থেকে সরিয়ে দিয়েছে তারা। তবে বিশ্বাসযোগ্য অ্যাকাউন্টের (যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) ক্ষেত্রে সেটি করা হচ্ছে না। টুইটারও গুজব প্রতিরোধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এজন্য নতুন আপডেটের মাধ্যমে মানুষকে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে তারা।

করোনাভাইরাসের কারণে ভিডিও কলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ফিচারের আপডেট করেছে হোয়াটসঅ্যাপও। আপডেটের কারণে এখন একসঙ্গে ৮ জন হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করতে পারেন। আগে ৪ জন হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে যুক্ত হতে পারতেন। এভাবে প্রায় প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম করোনার সময়ে ব্যবহারকারীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পাশে দাঁড়িয়েছে। কারো কারো দাবি, মানুষের উপকারে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button