ইসলাম শিক্ষা

ইসলামী আইন বা শরীয়ত কি?

Rate this post

📌ইসলামী আইন বা শরীয়ত কি?

উত্তরঃমহাবিশ্ব ও মানবজাতির স্রস্টা ও পালনকর্তা মহান আল্লাহর দেয়া পরিপূর্ণ জীবন-বিধান হলো ইসলাম। ইসলামের জীবনমুখী সকল প্রকার আইনই হলো ইসলামী আইন বা শরীয়ত।
ইসলামে মহান আল্লাহ ব্যক্তি জীবন,পারিবারিক,সামাজিক, রাস্ট্রীয়, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিধি বিধান দিয়েছেন।
যা মেনে চলা প্রতিটি মানুষের জন্য সর্বোত্তম।
কিন্তু ইমান আনা মুসলিমদের জন্যই এই আইন মানা ফরজ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিতে হবে।ইসলাম কে মানবরচিত ধর্ম মনে করলে এই আইন বুজতে ভুল করবেন।
ইসলাম জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিধান দিয়েছে। এটা মহান স্রস্টার নির্ধারিত জীবন-বিধান।
উইকিপিডিয়াঃ
🔶শরিয়ত (আরবি: شريعة‎; উচ্চারণ: [ʃaˈriːʕa], শারি’আহ্ বা শারি’আত; “কর্মপদ্ধতি”) বা ইসলামি আইন বা শরিয়ত আইন হচ্ছে জীবনপদ্ধতি ও ধর্মীয় আইন যা ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি অনুষঙ্গ। ইসলামি পরিভাষাকোষ অনুযায়ী, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং নবি মুহাম্মাদ যেসব আদেশ-নিষেধ, নিয়ম-নীতি ও পথনির্দেশনা মুসলমানদের জন্য প্রদান করেছেন, তার সমষ্টিই হচ্ছে শরিয়ত। এটি ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন হতে উৎসরিত, প্রধানত কুরআন ও হাদিস হতে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে যথাক্রমে আল্লাহ ও মুহাম্মাদের (ﷺ) দিগনির্দেশনার উৎস।
শরিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
অতঃপর আমি আপনাকে (মুহাম্মাদকে) কর্মপদ্ধতির উপর (শরিয়তের উপর) প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং আপনি তাই অনুসরণ করুন; আর আপনি মূর্খদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না।’ [সুরাতুল জাসিয়া:১৮]
ইসলামি কর্মপদ্ধতি বা শরিয়তের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। সকল ধরনের ইসলামি আইন, আদেশ-উপদেশ, বিধিনিষেধ ও অনুশীলনের উৎস হলো শরিয়ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন-
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম (অর্থাৎ শরিয়তে আল্লাহ কর্তৃক সকল বিষয়বস্তু সংযোজন সম্পন্ন হলো), তোমাদের উপর আমার কৃপা পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের [একমাত্র] ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। [সুরাতুল মায়িদা:৩]
এতে বোঝা যায়, যে শরিয়তের বিষয়বস্তুর পরিধি এতটা ব্যাপক, যে তা দীর্ঘ ২৩ বছরে পরিপূর্ণ হয়েছে (যেহেতু মুহাম্মাদের ﷺ নবুয়ত দীর্ঘ ২৩ বছরে সম্পন্ন হয়েছে)। ইসলামি ধর্ম বিশারদগণ শরিয়তের বিষয়বস্তুকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন-
আকিদা বা বিশ্বাসগত বিধিবিধান।নৈতিকতা ও চরিত্র সম্পর্কিত নিয়মনীতি।বাস্তব কাজকর্ম সংক্রান্ত নিয়মকানুন।
ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামি আইনশাস্ত্রে চারটি উৎসকে শরিয়তের স্বীকৃত উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন, সুন্নাহ, কিয়াস ও ইজমা।
শরিয়ত-ভিত্তিক আইনে কোন কর্ম সংঘটনকে বিচারিক বিশ্লেষণ করতে আইনগত অবস্থার পাশাপাশি নৈতিক মানদন্ডেও বিবেচনা করা হয় এবং এ কারণে শরিয়তের সিদ্ধান্তসমূহ ফরজ (আবশ্যিক), ওয়াজিব (প্রণোদনামূলক), নফল (নিরপেক্ষ), হালাল (গ্রহণীয়) ও হারাম (নিষিদ্ধ) – এই পাঁচ শ্রেণির যে কোন একটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
তবে কি তোমরা গ্রন্থের (কুরআন) কিছু অংশ বিশ্বাস করো, আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো? তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। আর মহাপ্রলয়ের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। [সুরাতুল বাকারা, আয়াত ৮৫]
শরিয়ত হলো ইসলামি জীবন পরিচালনার দিকনির্দেশনা। ইসলাম ও এর সম্পর্কিত সকল বিষয়াদির ধারণা শরিয়ত থেকেই জানা যায়। তাই মুসলমানদের নিকট শরিয়তই হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের একমাত্র উৎস। কোনটি হালাল, কোনটি হারাম ইত্যাদি জানা যায়। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ, নফল ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞানও শরিয়তের শিক্ষার মাধ্যমেই লাভ করা যায়।
শরিয়ত হলো আল্লাহ ও নবি মুহাম্মাদের (ﷺ) দিগনির্দেশনার সমষ্টি। অতএব, শরিয়তের প্রধান বা মৌলিক উৎস দুইটি। যথা- আল্লাহর বাণী কুরআন ও মুহাম্মাদের (ﷺ) বাণী ও কর্ম সুন্নাহ (হাদিস)।
পরবর্তীতে কুরআন ও সুন্নাহর স্বীকৃতি ও নির্দেশনার ভিত্তিতে শরিয়তের আরো দুইটি নির্ধারিত হয়। এগুলো হলো- ইজমা ও কিয়াস। সুতরাং, শরিয়তের উৎস মোট চারটি।
১. কুরআন
২. সুন্নাহ
৩. ইজমাঃকোনো নতুন সমস্যার সৃষ্টি হলে কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তার সমাধান বের করেন জ্ঞানী আলেমগন ঐক্যমতের ভিত্তিতে।
৪. কিয়াসঃ নতুন সৃষ্টি হওয়া কোন সমস্যার ইসলামের জ্ঞান অনুযায়ী অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেয়াকে কিয়াস বলে।
এক্ষেত্রে জ্ঞানী আলেমগনের অনুমান অধিক গ্রহনযোগ্য হবে।
🔶এবার ইসলামের আইন শাস্ত্রের সর্বাধিক আলোচিত শাখা রাস্ট্রীয় দন্ডবিধি সম্পর্কে জানবো।
ইসলামী শরী’আতে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: হুদৃদ, কিসাস ও তাষীরাত। তন্মধ্যে যেসব অপরাধের শাস্তি কুরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করে দিয়েছে: তা হচ্ছে, হুদুদ ও কিসাস। পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের কোনো শাস্তি কুরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকদের অভিমতের উপর ন্যস্ত করেছে, সেসব শাস্তিকে শরীআতের পরিভাষায় ‘তা’যিরাত’ তথা দণ্ড বলা হয়। কুরআনুল কারীম হুদুদ ও কিসাস পূর্ণ বিবরণ ব্যাখ্যা সহকারে নিজেই বর্ণনা করে দিয়েছে। আর দণ্ডনীয় অপরাধের বিবরণকে রাসূলের বর্ণনা ও সমকালীন বিচারকদের অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষ বিশেষ অপরাধ ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তির কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকের অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিচারক স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেরূপ ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করবেন, ততটুকুই দেবেন।
🔶ইসলামের অপরাধ আইন (criminal law) সম্পর্কে ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার পাশ্চাত্যে ও মুসলিম সমাজগুলিতে বিদ্যমান। ইসলামী অপরাধ আইনের কিছু বিষয়কে আংশিকভাবে উপস্থাপন করে এগুলির ভিত্তিতে ইসলামী আইন, বিচার ও বিচারব্যবস্থাকে বর্বর, মধ্যযুগীয় এবং পুরোহিততান্ত্রিক বলে অপপ্রচার করা হয়।
যে কোনো রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব (১) নাগরিকদের বৈষম্যহীন অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা (২) বহির্শত্রুর আগ্রাসন থেকে রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসলামেও এ দুটি বিষয়কে রাষ্ট্রের মূল দায়িত্বগুলির অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রথম দায়িত্ব পালনের জন্য ইসলামে আইন ও বিচারব্যবস্থা বিষয়ক নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামী আইন ও আইন প্রয়োগের দুটি দিক রয়েছে: (১) আইন ও (২) বিচারব্যবস্থা। ইসলামী আইন বিষয়ে অনেক অপপ্রচার থাকলেও যে কোনো মতের ও ধর্মের গবেষক ইসলামী বিচারব্যবস্থার শ্রেষ্ঠতের বিষয়ে নিশ্চিত হবেন। বিচারকের নিরপেক্ষতা, বিচারের সচ্ছতা, সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষ্য-প্রমাণের সঠিকত্ব প্রমাণ, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, সন্দেহের সুযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকললের জন্য ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম অত্যন্ত কার্যকর, মানবিক ও সচ্ছ বিচারব্যবস্থা প্রদান করেছে।
ইসলামের পারিবারিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক, সাম্পদিক, অধিকার বিষয়ক ও অন্যান্য সকল দেওয়ানী (civil) আইনের বিষয়েও অবিকল একই কথা বলতে হবে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি দেওয়ানী, সামাজিক, পারিবারিক ও অন্যান্য বিষয়ে ইসলামী আইন গৃহীত, প্রচলিত বা স্বীকৃত হয়েছে।
এগুলির পাশাপাশি ইসলামে ‘‘অপরাধ আইন’’ রয়েছে। ইসলামে অল্প কয়েকটি অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট সকল অপরাধের ক্ষেত্রে যুগ, জাতি ও সমাজের প্রেক্ষাপটে শাসক, পার্লামেন্ট, সরকার বা বিচারক শাস্তির প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারেন।
ইসলামে নির্ধারিত শাস্তিগুলি নিম্নরূপ: (১) ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। (২) ইচ্ছাকৃত অঙ্গহানির শাস্তি অনুরূপ অঙ্গহানি। (৩) চুরির শাস্তি কব্জি থেকে হাত কেটে দেওয়া। (৪) ব্যভিচারের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড। (৫) কারো বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ করে তা ৪ জন সুস্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারী ও সাক্ষীগণের শাস্তি ৮০ বেত্রাঘাত। (৫) জেনে বুঝে ইসলাম গ্রহণ করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। (৬) মদপানের শাস্তি ৪০ বা ৮০ বেত্রাঘাত।
এসকল দন্ড বিধি প্রয়োগ করবেন রাস্ট্র ও বিচারিক আদালত।
সাধারণ মানুষ নয়।
🔶উপসংহারঃ মানুষ নিজের জীবনের জন্য নিজে বিধান বানালে তাতে বার বার ভুল ত্রুটির সুযোগ থাকে।একারণে তা বার বার সংশোধন করতে হয়।স্রস্টার আইন সুন্দর সাবলীল ও সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য। যা পালন করলে ব্যক্তিজীবন,পারিবারিক জীবন,সামাজিক, রাস্ট্রীয় জীবন,রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনে সফলতা আসবে।
আল্লাহ সকলকে হেদায়েত ও রহমত দান করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button