ইসলাম শিক্ষাকুরআনের আলো

কবর খননের সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কী

Rate this post

কবর খননের সঠিক নিয়ম

আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতির কবরের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু অনেকেরই কবর খননের সঠিক ও সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি জানা নেই। কোন্ তরিকায় কিভাবে এবং কতুটুকু কবর খনন করতে হয় তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে কবর খননের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
কবর দুই ধরনের। হুরমতে মুসাহারাত এর শরয়ী বিধান

১. ‘লাহদ’ বা বগলী কবর। ২. ‘শাক্ব’ বা সিন্দুকী কবর
‘লাহদ’ বা বগলী কবর হলো, প্রথমে স্বাভাবিক নিয়মে চার কোণা করে পুরো কবর খনন করবে। অতঃপর কিবলার দিকের দেয়ালের মধ্যে নিচে লম্বালম্বি করে একটি গর্ত খনন করবে। তারপর ঐ গর্তের মধ্যে লাশ রেখে কাঁচা ইট অথবা বাঁশ খাঁড়া করে দিয়ে গর্তের মুখ পুরোপুরি বন্ধ করে দিবে। সবশেষে কবর থেকে বের হওয়া সবগুলো মাটি ঢেলে কবর পূর্ণ করে দিবে।
আর ‘শাক্ব’ বা সিন্দুকী কবর হলো, স্বাভাবিক নিয়মে চার কোণা করে পুরো কবর খনন করবে। এরপর নিচের দিকে গিয়ে কবরের মাঝ বরাবর লম্বালম্বি করে লাশ শোয়ানোর মতো ছোট একটি গর্ত খনন করবে। তারপর সেই গর্তে লাশ রাখার পর উপরে কাঁচা ইট বা বাঁশ বিছিয়ে দিয়ে গর্তের মুখ পুরোপুরি বন্ধ করে দিবে। এতে কবরটি ছাদ বিশিষ্ট সিন্দুকের মতো দেখা যাবে। এরপর কবরে মাটি ঢেলে দাফনকাজ পূর্ণ করবে।
যেসব জায়গার মাটি শক্ত ও মজবুত সেসব জায়গায় বগলী কবর খনন করা সুন্নত। আর যেসব জায়গার মাটি নরম, বগলী কবর করলে মাটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব জায়গায় সিন্দুকী কবর করবে।
আমির ইবনে সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَنَّ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي هَلَكَ فِيهِ: الْحَدُوا لِي لَحْدًا وَانْصِبُوا عَلَىَّ اللَّبِنَ نَصْبًا كَمَا صُنِعَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏
সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রা. তাঁর মৃত্যু-পীড়ায় আক্রান্ত অবস্থায় বললেন, আমার জন্য তোমরা লাহদ (বগলী) কবর তৈরী করবে এবং (কবরে শোয়ানোর পর) আমার উপরে কাঁচা ইট খাঁড়া করে দিবে যেভাবে করা হয়েছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাফনের ক্ষেত্রে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৯৬৬
আর কবরের গভীরতা সর্বনিম্ন নাভি পর্যন্ত থেকে সর্বোচ্চ একজন মধ্যম গড়নের ব্যক্তি দু’হাত উপরে তুলে দাঁড়ালে যতটুকু লম্বা হয় ততটুকুর মধ্যে রাখবে। তবে উল্লেখিত পরিমাণের মধ্যে যে এলাকায় যেটা প্রচলিত আছে সে এলাকায় সে পরিমাণই গভীর করা উচিত।
আর কবরের দৈর্ঘ্য হবে মৃতের দৈর্ঘ্য সমান এবং প্রস্থ হবে দৈর্ঘ্যের অর্ধেক বা তারচেয়ে কিছুটা কম।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭৮৩, ১১৭৮৪, ১২১৭৭ হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৪; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৭/৬৬
উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তিকে ডান কাত করে সীনা ও চেহারা কেবলামুখী করে শোয়ানো সুন্নত। চিৎ করে শুইয়ে শুধু চেহারা ডান দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার দ্বারা সুন্নত আদায় হবে না। তাই পূর্ণ ডান কাতে শোয়ানোর জন্য কবরের পূর্ব দেয়ালে টেক লাগিয়ে শোয়াবে কিংবা এমনভাবে কবর খনন করবে যেন লাশ কবরে রাখলে তা সহজেই কিবলামুখী হয়ে যায়।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬

কবর তালকিন করার নিয়ম                  দাফনের নিয়ম
কবর ছবি                                         কবর শব্দের অর্থ কি
খ্রিস্টানদের কবর দেওয়ার পদ্ধতি          কবর স্থান
কবরে লাশ রাখার পর কি হয়               কবর কত প্রকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button